মিয়া মোহাম্মদ ছিদ্দিক, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
তারিখঃ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ইং
নীল আকাশে ভাসমান মেঘ, নদীর ধারে দুলছে কাশফুল—প্রকৃতির এই মনোরম দৃশ্যের মধ্যেই ঢাকের আওয়াজে মুখর হয়ে উঠেছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী। দুর্গাপূজার আগমনী বার্তা জানান দিতে শুরু হয়েছে দেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট।
প্রতি বছর পূজার আগে কটিয়াদীর পুরাতন বাজারে বসে এই বিশেষ হাট। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) শুরু হওয়া হাট চলবে শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাত পর্যন্ত।৫
০০ বছরের ঐতিহ্য
জনশ্রুতি আছে, ১৬০০ শতকের প্রথমভাগে স্থানীয় সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় দুর্গাপূজার জন্য সেরা ঢাকির খোঁজে বিক্রমপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বাদকদের আমন্ত্রণ জানান। তখন থেকেই কটিয়াদীতে ঢাকিদের সমাগম ঘটে, আর সেই সূত্রেই ঢাকের হাটের সূচনা।
হাটের বৈশিষ্ট্য
এখানে ঢাক বা বাঁশি কেনাবেচা হয় না। বরং বাজনা শুনে পূজারিরা দল পছন্দ করে বায়না করেন। ঢাকিরা নানা কসরত করে পূজারিদের মন ভোলান।
এবারও মুন্সীগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েক শ’ ঢাকি যোগ দিয়েছেন। পূজা উদযাপন কমিটিগুলোও নরসিংদী, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জসহ নানা এলাকা থেকে দল বেঁধে ঢাকিদের বায়না করতে আসছেন।
ঢাকিদের অভিজ্ঞতা
সুনামগঞ্জ থেকে আসা বিপুল দাসের ৮ সদস্যের দল বলছে—৩৫ হাজার টাকার দাবি তুলেছেন তারা। দরদাম মিলে গেলে পূজারিতে যোগ দেবেন।
মুন্সীগঞ্জের প্রবীণ ঢাকি হরিপদ (৭৫) জানান, তিনি টানা ৩০ বছর ধরে এ হাটে আসছেন। এ বছর তাদের ১৫ জনের দলের জন্য ৬০ হাজার টাকা দাবি করলেও বায়নাদাররা ৪০ হাজার টাকা প্রস্তাব দিয়েছেন।
নরসিংদী থেকে আসা পূজারি বিনয় ভোষন বলেন, “৭ সদস্যের একটি দলকে ২৫ হাজার টাকায় বায়না করেছি। ঢাক ছাড়া পূজা জমে না, তাই কটিয়াদীর হাটে এসে বেছে নিতে হয়।”
হাট পরিচালনা ও নিরাপত্তা
হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য বাবু জিৎ সাহা জানান, ঢাকিদের তালিকা তৈরি, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এবং সহযোগিতা তাদের দায়িত্বে রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনও সার্বিক নিরাপত্তায় তৎপর। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম বলেন, “ঢাকিদের প্রয়োজনীয় দেখভাল নিশ্চিত করতে প্রশাসন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।”
সমস্যায় ঐতিহ্য
ঢাকিদের জন্য সরকারিভাবে একটি বিশ্রামাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও দীর্ঘদিন ধরে তা অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে ঢাকিদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এতে তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
কটিয়াদীর এই ঢাকের হাট শুধু পূজার আনন্দ নয়, বরং পাঁচ শতকের ঐতিহ্য, লোকসংস্কৃতি আর সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক হয়ে আজও টিকে আছে।