গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর এলাকার একটি কারখানার শ্রমিকেরা হাজিরা বোনাস, নাইট বিল ও টিফিন বিল বৃদ্ধি, প্রশাসন বিভাগের ব্যবস্থাপকের অপসারণসহ ১২ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। আর অ্যান্ড জি বিডি লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা আজ রোববার বেলা দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে এ বিক্ষোভে অংশ নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রায় তিন ঘণ্টা শ্রমিকেরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এতে সড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পরে কারখানার প্রশাসন বিভাগের ব্যবস্থাপক হাসান আহাম্মেদ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে শ্রমিকেরা সড়ক থেকে সরে যান।
এদিকে শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে এখনো গাজীপুরের চারটি কারখানা বন্ধ আছে। অন্য সব কারখানায় স্বাভাবিক উৎপাদনপ্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। শ্রমিকেরা আজ সকাল থেকেই কাজে যোগ দেন। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিল্প পুলিশের পাশাপাশি সেনাসদস্যরাও প্রস্তুত রয়েছেন।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন কারণে গাজীপুরের চারটি কারখানা এখনো বন্ধ রয়েছে। তারা শ্রম আইন অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। বিকেলে একটি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া আর কোনো কারখানায় সমস্যার খবর পাওয়া যায়নি।
আর অ্যান্ড জি বিডি লিমিটেড কারখানার বিক্ষোভকারী শ্রমিকেরা জানান, কারখানার মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের ব্যবস্থাপক হাসান আহাম্মেদ বিভিন্ন বিষয়ে শ্রমিকদের ডেকে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে গালিগালাজ করেন। এ কারণে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেন শ্রমিকেরা। এ ছাড়া হাজিরা বোনাস ৫০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১০০০ টাকা, রাত আটটা পর্যন্ত কাজ করলে টিফিন বিল ২০ থেকে বৃদ্ধি করে ৪০ টাকা চান শ্রমিকেরা। শ্রমিকদের অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে—ছুটি কাটলে হাজিরা বোনাস কাটা যাবে না, অর্জিত ছুটির টাকা প্রতিবছরের জানুয়ারি মাসে পরিশোধ করতে হবে, ভেতরে ক্যানটিনের ব্যবস্থা করতে হবে, শ্রমিকের প্রয়োজন অনুযায়ী সব ধরনের প্রাপ্য ছুটি প্রদান করতে হবে এবং প্রশাসন ম্যানেজার অযথা কোনো শ্রমিককে সেকশনে ডেকে এনে খারাপ আচরণ করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কারখানার শ্রমিক মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমাদের হাজিরা বোনাস, নাইট বিল, টিফিন বিল নিয়েও কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার আবেদন করলেও তারা আমাদের এসব আবেদনের কোনো গুরুত্ব দেয় না। যেসব শ্রমিক এসব দাবির সঙ্গে আছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে বিনা কারণে বরখাস্ত করা হয়। পরে একসময় তাঁদের চাকুরিচ্যুতি করা হয়।’
এসব বিষয়ে মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের ব্যবস্থাপক হাসান আহাম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা অযৌক্তিক ও মিথ্যা। বর্তমান পরিস্থিতিতে কি কোনো শ্রমিকের গায়ে হাত তোলা যায়?’
জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল হালিম বলেন, আর অ্যান্ড জি বিডি গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানার মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের ব্যবস্থাপক স্বেচ্ছায় পদত্যাগের পাশাপাশি সব দাবি কর্তৃপক্ষ মেনে নিলে শ্রমিকেরা মহাসড়ক থেকে সরে যান। পরে বিকেল পাঁচটায় যান চলাচল শুরু হয়।
সম্পাদক : নূর আলম শেখ
পুরানা পল্টন, ঢাকা-১২০০।
ইমেইল : ajkerjagaran@gmail.com
Copyright © 2025 আজকের জাগরণ All rights reserved.